শিশুদের নবীজি
নামাজের সময় হয়ে এসেছে। তাই নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছুটছেন মসজিদের দিকে। একা নয়, তার কোলে প্রিয় নাতিয় হাসান ও হোসাইন। তাদেরকে কোল থেকে নামিয়ে তিনি নামাজ শুরু করলেন।
নামাজের কোনো এক সিজদায় তিনি বেশ কিছুক্ষণ সময় সিজদাবস্থায় কাটালেন। স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও অনেকক্ষণ বেশি। কিছু ঘটে গেল কি-না, এ আশংকায় এক সাহাবী সিজদা থেকে মাথা তুলে সামনের দিকে তাকালেন। অবাক হয়ে তিনি তাকিয়ে দেখেন, একটি শিশু নবীজির পিঠে চড়ে বসে আছে। এ দেখে তিনি আবার সিজদায় চলে গেলেন।
নামাজ শেষ হওয়ার পর অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম আরয করলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ! আজ যে নামাজের মধ্যে এতো লম্বা সিজদা করলেন! আমরা তো ভেবেছিলাম কিছু ঘটে গেল নাকি ওহী নাযিল হচ্ছিল।' নবীজি বললেন, এসবের কিছুই হয়নি। ওই আমার নাতি আমার পিঠে চড়ে বসেছিল। আমি তাকে নামিয়ে দিয়ে উঠতে চাইনি। সে তার খেলা শেষ করে নামার পর আমি মাথা তুলেছি।' (ইমাম আহমদ আব্দুল্লাহ বিন শাদ্দাদের সূত্রে তার বাবা থেকে বর্ণনা করেছেন)
ভাবা যায়! স্বয়ং আল্লাহর নবী একটি ছোট্ট শিশুর জন্য কীভাবে তাকে নামাজেও খেলার সুযোগ করে দিলেন। তাঁর হৃদয়ভরা মমতা ও আদরের এমন ব্যবহার দেখে অবাক হয়ে পুলকিত হতেন খোদ সাহাবায়ে কেরাম।
আরেকদিন। আকরা বিন হাবিস নামের এক সাহাবী রাসূলের কাছে এসে দেখেন, তিনি পরম ভালোবাসায় জড়িয়ে শিশু হাসানকে চুমো দিচ্ছেন । এ দৃশ্য দেখে আকরা বললেন, 'আমার তো দশটি সন্তান, আমি কিন্তু কাউকে এভাবে চুমো দিইনি।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, 'মানুষকে যে দয়া করে না, আল্লাহও তাকে দয়া দেখান না।' (মুসলিম)
শিশুকে ধাপে ধাপে কীভাবে তাকে গড়ে তুলতে হবে, তা নবীজি শিখিয়েছেন। শিশুর পরিচর্যায় ইসলামী রীতিনীতি শিখিয়েছেন অনাগত উম্মতের জন্য।
শিশুদের জন্য তার মায়া ও আদরভরা ভালোবাসার কথা সাহাবায়ে কেরামও অনুভব করতেন। তাই তাদের যে কারোর সন্তান হলে প্রথমেই নিয়ে আসতেন আল্লাহর রাসূলের কাছে। নবীজি শিশুটিকে কোলে তুলে নিতেন, তারপর সামান্য কিছু নিজের মুখে চিবিয়ে বাচ্চাটির মুখে দিতেন। তারপর নবাগত শিশুর জন্য দুআ করে দিতেন, আল্লাহ পাক যেন বরকত ও কল্যাণ দিয়ে তাকে ঘিরে রাখেন সবসময়।
হযরত আনাস রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, 'আমার ছোট একটি ভাই ছিল। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন আমাদের কাছে আসতেন, তাকে দেখলেই বলতেন, 'হে আবু উমায়ের, কই গেল তোমার নুগায়ের!' (নুগায়ের হচ্ছে ছোট পাখি, যা দিয়ে সে খেলত) (বুখারী)
এভাবেই মদীনার ছোট ছোট শিশু-বাচ্চারা প্রিয় নবীর স্নেহ ও সান্নিধ্যের ভালোবাসার ছায়াতলে তাদের স্বর্ণালী জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়টুকু পার করেছেন। কালে কালে তারাই হয়েছিলেন পৃথিবীর সেরা মানুষ।
কি ভাগ্য তাদের!
0 মন্তব্যসমূহ